মৃত্যুর পর: এক অচেনা জগতের হাতছানি

আমার মৃত্যুর পর থেমে যাবে কথার গুঞ্জন,
বুকের স্পন্দনটুকু মূর্ত হবে ঝিল্লীর ঝংকারে,
জীবনের পথপ্রান্তে ভুলে যাব মৃত্যুর শঙ্কারে,
উজ্জ্বল আলোর চোখে আঁকা হবে আঁধার-অঞ্জন
… …
মুহূর্তে বিস্মৃত হবে সব চিহ্ন আমার পাপের
কিছুকাল সন্তর্পণে ব্যক্ত হবে সবার স্মরণ
আমার মৃত্যর পর, জীবনের যত অনাদর
লাঞ্ছনার বেদনায়, স্পৃষ্ট হবে প্রত্যেক অন্তর

আচ্ছা! মৃত্যুর ঠিক আগমুহুর্তের অনুভূতিটা কেমন? একজন মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার কেমন লাগে? অনেকের কাছে শুনেছি মৃত্যুর সময় মানুষ তৃষ্ণার্ত হয়ে আশেপাশের মানুষের কাছে পানি চাইতে থাকে। হুজুররা বলেন ওই সময় নাকি শয়তান পানির পাত্র হাতে নিয়ে ওই লোককে ইমান ত্যাগ করতে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। আবার আরেকটা বর্ণনায় এসেছে মৃত্যুর অনুভূতি নাকি জীবন্ত শরীর থেকে চামড়া ছিলে নেয়ার মতোই যন্ত্রনাদায়ক। একালের বিজ্ঞানীরাও নেয়ারলি ডেথ এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। কিন্তু ফলাফল ঘুরেফিরে সেই একই – মারা যাওয়ার পর মানুষগুলা কোথায় যায়, তা কিছুতেই জানা যায়নি।

বিখ্যাত অভিনেতা এডমন্ড গোয়েন কে মৃত্যুর আগ মুহুর্তে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, মৃত্যুর অনুভূতিকে আপনার কাছে কঠিন মনে হচ্ছে কি না? জাত অভিনেতার উত্তরটা ছিলো এরকম, “Yes, it’s tough, but not as tough as doing comedy….” সারা জীবন অভিনয়ের মাধ্যমে ক্রমাগত মানুষকে হাসানো গোয়েন ভালোই জানতেন কমেডি করা কতটা কঠিন কাজ, তাই এর তুলনায় মৃত্যুর যন্ত্রনাকেও তার কাছে মনে হয়েছে তুচ্ছ, সামান্য ঘটনা।

মৃত্যুর ওপারে আরেকটা জগত কি আসলেই আছে?

মৃত্যুর অনুভূতি নিয়ে এখন মাথা ঘামিয়ে মনে হয় খুব একটা লাভ নাই, কারণ আমরা চাই বা না চাই, সময় হলে সেটা সবাই-ই টের পাবে। আমার শুধু মনে হয় ইশশ.. মারা যাওয়ার পরে যদি ক্যাসপারের মতো ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারতাম, চুপ করে উঁকি দিতে পারতাম কাছের মানুষদের বাসাবাড়িতে, অথবা হালকা অবয়ব নিয়ে ইচ্ছামতো ভেসে বেড়াতাম আকাশে বাতাসে, অথবা মাঝ রাতে বন্ধুদের জানালায় উঁকি দিতাম অবধারিতভাবে, কত মজা হতো! 😀 নিরবে দেখে যাওয়া, পুরো পৃথিবীটাই আমার কাছে হয়ে যেতো একটা চলচ্চিত্রের মতো।

তবে মৃত্যুর পর করার মতো কিছু না থাকলেও আগেভাগে কিন্তু অনেক কিছুই করা যাচ্ছে। আমার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে জ্যাক ফ্রোজের আইডিয়াটা। এই লোক গত বছর জুন মাসে হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু কিছুদিন আগে তার স্বজনরা হঠাৎ করে আবিষ্কার করেন তাদের ইনবক্সে জ্যাকের মেইল আইডি থেকে একটি মেইল করে এসেছে! মরা মানুষ ইমেইল করেছে, ভয়াবহ ব্যাপার!! আরও অদ্ভূত ব্যাপার হচ্ছে ওই ইমেইল গুলোতে এমন সব তথ্য ছিলো যেগুলা জ্যাক ছাড়া আর কেউ জানতো না। এমনকি তার মৃত্যুর কিছুদিন পরে এক বন্ধু পা ভেঙ্গে ফেলেছে, সেটারও উল্লেখ আছে তাকে উদ্দেশ্য করে পাঠানো মেইলে।

তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানেন? কে বা কারা এই মেইল গুলো পাঠাচ্ছে, জ্যাকের সম্মতিতে এটা করা হচ্ছে কি না, এসব নিয়ে এখন মোটেই মাথা ঘামাতে রাজী নয় জ্যাকের পরিবারের সদস্যরা। হতে পারে এটা তাদের-ই ভেতর কেউ করেছে, অথবা হয়তো মৃত্যুর আগে কোনও কোম্পানীর পক্ষ থেকে এই সার্ভিসটি কিনেছিলেন জ্যাক। কেউ-ই বিশ্বাস করছেন না যে মৃত্যুর পর এই মেইলগুলো ওপার থেকে নিজেই পাঠিয়েছেন তিনি, তবে এটাকে জ্যাকের ভালোবাসার শেষ নিদর্শন হিসেবেই মনে রাখতে চান তার বন্ধুরা।

কিন্তু সেটাতো আগে থেকে প্ল্যান করা ছিলো, মারা যাওয়ার পর কি কেউ যোগাযোগ করতে পেরেছে বেঁচে থাকা মানুষদের সাথে? অথবা পরলৌকিক জীবনের পক্ষে (অথবা বিপক্ষে) কি আমাদের হাতে কোনও তথ্য প্রমান আছে?? – সোজা উত্তর হলো না, নেই।

একটা কথা প্রচলিত আছে যে, একেবারে যমের বাড়ী থেকে ফেরত আসা মানুষরা নাকি অচেতন অবস্থায় অন্ধকার সুড়ংগ দেখতে পান, সেটা থেকে উপরে উঠলে তীব্র আলোর ঝলকানি আর তার ভেতর মৃত আত্বীয়স্বজনদের মুখ, অনেকে দাবী করেন তারা মৃতদের সাথে কথাও বলতে পেরেছেন। যাদের এই NDE মানে Near Death Experience হয়েছে তারা সবাই হুবহু একই বর্ণনা দিয়েছেন। এই যুক্তির উপর ভিত্তি করে শুরু হয়েছিলো গবেষণা। ধারণা করা হয়েছিলো এর সূত্র ধরেই হয়তো মৃত্যু পরবর্তী জীবনের পক্ষে একটা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুজে পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, এগুলো নিছক-ই স্বপ্ন, বাস্তব কিছু না। বিশেষভাবে ইন্সট্রাকশন দেয়া হলে যে কেউ যেকোনো সময় এধরণের স্বপ্ন দেখে ফেলতে পারেন, এর সাথে মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক নাই।

তাহলে আর কি করা! যতক্ষণ পর্যন্ত বিজ্ঞান নতুন কোনও থিওরী নিয়ে না আসছে ওপারের জীবন নিয়ে, ততদিন পর্যন্ত জন্মদিনের পার্টিতে পাওয়া সারপ্রাইজ গিফটের মতোই রহস্য হয়ে থেকে যাবে মৃত্যু আর তারপরের জগত। নতুন কোনও বৈজ্ঞানিক থিওরী বলেন, আর মৃত্যু বলেন, কোনোটার উপর-ই আমাদের কোনও হাত নাই, দুইটার জন্য আমরা শুধু অপেক্ষাই করতে পারি। 🙂 

4 comments

  1. হুম। আমিও আপনার মতো করেই বিষয়টা ভেবে দেখেছিলাম। আসলে কী হবে ওপারে? হয়তোবা ক্যাসপারের মতো করে আমরা ঘুরে বেড়াব কিন্তু তখন কাউকে জানাতে পারবো না আমাদের অনুভূতি গুলো। হতে পারে আবার নাও হতে পারে, কেননা এর উপর আমাদের সত্যিকারের কোন অভিজ্ঞতা নেই। অনেকে মৃত্যুর অতি কাছাকাছি গিয়ে ফেরত এসেছেন, মৃতকে জয় করেছেন। এসবের উপর হলিউডে কিছু মুভিও হয়েছে, যেমন- Here After, Invisible. আসলে জিনিসটা আমাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়েনা। আপনার শেষ কমেন্টটার সাথে সহমত পোষণ করছি- “সে জন্যই তো অপেক্ষা ছাড়া আর পথ দেখছি না” অপেক্ষায় রইলাম…..:)

    • মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে ফিরে আসা মানুষদের অভিজ্ঞতা গুলাকে বিজ্ঞানীরা এখন স্বপ্ন হিসেবেই দেখছেন, তাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে রেমের সময় ব্রেনের লজিক ইউনিট যদি সজাগ হয়ে যায় তাহলে যে কারও এরকম হতে পারে 😦 ঠিক-ই বলেছেন এই ব্যাপারটা আসলে আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না..

মন্তব্য করুন